মারইয়াম (আঃ) এবং ঈসা (আঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

মারইয়াম এর পিতা ইমরান ছিলেন তৎকালীন যুগে বনী ইসরাঈলের ইমাম। তাঁর মা হান্না ছিলেন ইবাদত গুজার মহিলা। ইমরানের স্ত্রী বলেছিলেন, “হে আমার প্রতিপালক, আমার গর্ভে যা আছে তা একান্ত তোমার জন্য আমি উৎসর্গ করলাম”। অর্থাৎ বায়তুল মুকাদ্দাসের খাদিম বানাবেন। অতঃপর তিনি একটি কন্যা সন্তান প্রসব করলেন। তিনি তাঁর নাম রাখলেন মারইয়াম। দুগ্ধ পানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাঁর মা তাকে নিয়ে বায়তুল মসজিদে চলে যান এবং সেখানকার ইবাদতকারী লোকদের নিকট সোপর্দ করেন।

মারইয়ামের দেখাশুনার দায়িত্ব কে গ্রহণ করবে এই বিষয় নিয়ে সকলে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। হযরত যাকারিয়া (আঃ) ছিলেন সে যুগের নবী। তাছাড়া তিনি মারইয়াম (আঃ) এর বোন মতান্তরে খালার স্বামী ছিলেন। তিনিও চাচ্ছিলেন, মারইয়ামের দেখাশুনার দায়িত্ব নিতে। অবশেষে তারা কলমের মাধ্যমে তিনবার লটারি করলেন। প্রতিবারই তাতে যাকারিয়া (আঃ) এর নাম উঠলো। তাই তিনিই মারইয়াম (আঃ) এর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন।

যরত যাকারিয়া (আঃ) মারইয়ামের জন্য বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদে একটি কক্ষ নির্ধারণ করে দেন। তিনি ছাড়া ঐ কক্ষে অন্য কেউ প্রবেশ করত না। হযরত যাকারিয়া (আঃ) যখনই মারইয়ামের কক্ষে প্রবেশ করতেন তখনই তাঁর নিকট বে-মৌসুমের বিরল খাদ্য দ্রব্য দেখতে পেতেন। তিনি জিজ্ঞেস করতেনঃ হে মারইয়াম, এসব তুমি কোথায় পেলে? তিনি বলতেন, “এসব আল্লাহর নিকট থেকে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান করেন”।


পরবর্তীতে মারইয়াম (আঃ) একদিন মসজিদের পূর্বদিকে এক স্থানে পর্দা টাঙ্গিয়ে সেখানে অবস্থান করছিলেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁর নিকট ফেরেশতা জিবরীল (আঃ)-কে প্রেরণ করেন। তিনি মারইয়ামের নিকট মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করলেন। মারইয়াম ভয় পেয়ে বললেন, “আমি তোমার থেকে করুনাময় আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি যদি তুমি আল্লাহভীরু হও”। জিবরীল (আঃ) বললেন, “আমি তো কেবল তোমার প্রভুর প্রেরিত। এজন্য যে, আমি তোমাকে একটি পবিত্র পুত্র সন্তান দান করে যাব”। মারইয়াম বললেন, “কিভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে? অথচ কোন মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিনী নই”। জিবরীল (আঃ) বললেন, “এভাবেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজ ব্যাপার এবং আমরা তাকে মানবজাতির জন্য একটা নিদর্শন ও আমাদের পক্ষ হতে বিশেষ অনুগ্রহরূপে পয়দা করতে চাই। তাছাড়া এটা নির্ধারিত বিষয়”।

অতঃপর জিবরীল (আঃ) মাইয়ামের মুখে অথবা তাঁর পরিহিত জামায় ফুঁক মারলেন এবং তাতেই তাঁর গর্ভ সঞ্চার হল। এরপর তিনি এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেলেন এবং প্রসব বেদনার অবস্থায় এক খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিলেন। তিনি বললেন, “হায়, এর পূর্বে আমি যদি মারা যেতাম ও লোকের স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হতাম”। তখন এক আহ্বানকারী তাকে বললেন, “তুমি দুঃখ করো না, তোমার নীচ দিয়ে তোমার প্রতিপালক এক নহর সৃষ্টি করেছেন। তুমি তোমার দিকে খেজুর গাছের কাণ্ডে নাড়া দাও, তা তোমাকে পাকা তাজা খেজুর দান করবে। সুতরাং আহার কর, পান কর ও চোখ জুড়াও”। মারইয়ামকে আরও বলা হল, “মানুষের মধ্যে কাউকেও যদি তুমি দেখ, তখন বলবেঃ আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে মৌনতাবলম্বনের মানত করেছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে বাক্যালাপ করব না”।

সন্তান প্রসবের পর তিনি তাঁর সন্তানকে নিয়ে তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হল। লোকেরা বিস্মিত হয়ে তাঁকে বলল, “হে মারইয়াম, তুমি তো এক অদ্ভুত কাণ্ড করে বসেছ”। মারইয়াম তাঁর সন্তানের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। তারা বলল, “কোলের শিশুর সাথে আমরা কিভাবে কথা বলব”। তখনই মারইয়ামের শিশুপুত্র ঈসা (আঃ) বলে উঠলেন, “আমি তো আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, আমাকে নবী করেছেন। যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন”।

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel