নবী শাইয়া আলাইহিস সালাম এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
হযরত দাঊদ ও ইয়াহইয়া (আঃ) এর মধ্যবর্তী সময়ে আগমনকারী নবীদের মধ্যে শাইয়া ইবন আমসিয়া (আঃ) অন্যতম। তাঁর আবির্ভাব হয়েছিল যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া (আঃ) এর পূর্বে। তিনি সেই সব নবীর একজন যারা ঈসা (আঃ) ও মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আগমনের সুসংবাদ প্রচার করেছিলেন। ঐ সময়ে বাইতুল মুকাদ্দাসে বনী ইসরাঈলের শাসক ছিলেন রাজা হিযকিয়া। যে কোন সংস্কার ও সংশোধনমূলক কাজে তিনি নবী শাইয়ার আদেশ নিষেধ মেনে চলতেন।
একদা রাজা হিযকিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাঁর পায়ে একটি ক্ষত সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে ব্যাবিলনের রাজা সানহারীব ছয় লক্ষ সৈন্য নিয়ে বাইতুল মুকাদ্দাস আক্রমণে উদ্যোগী হয়। রাজা হিযকিয়া নবী শাইয়ার নিকট জিজ্ঞেস করেন যে, সানহারীব ও তাঁর সৈন্যবাহিনী সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কি ওহী প্রেরণ করেছেন? তিনি বললেন, তাদের সম্পর্কে আমার নিকট কোন প্রকার ওহী আসে নি।
কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর নবী শাইয়ার নিকট এ মর্মে ওহী আসে যে, অল্প দিনের মধ্যে রাজা হিযকিয়ার মৃত্যু হবে। সুতরাং তিনি যেন তাঁর পছন্দমত কাউকে স্থলাভিষিক্ত করেন। নবীর নিকট থেকে এ সংবাদ পেয়ে রাজা কিবলামুখী হয়ে সালাত ও তাসবীহ পাঠ করে কেঁদে কেঁদে আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন। আল্লাহ রাজার দোয়া কবুল করে তাঁর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং শাইয়া (আঃ) এর নিকট ওহীর মাধ্যমে সুসংবাদ দেন যে, তিনি তাঁর আয়ু পনের বছর বৃদ্ধি করেছেন এবং তাঁর শত্রু সানহারীবের কবল থেকে তাকে রক্ষা করেছেন। নবীর নিকট থেকে এ সুসংবাদ শুনে রাজার অন্তর থেকে সমস্ত ভয়-ভীতি দূর হয় এবং কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সিজদাবনত হয়ে তিনি আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অতঃপর আল্লাহ শাইয়ার নিকট ওহী প্রেরণ করেন এবং রাজাকে এ কথা জানিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন ডুমুরের রস পায়ের ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দেন, তাতে তিনি আরোগ্য লাভ করবেন। রাজা এ নির্দেশ পালন করেন এবং আরোগ্য লাভ করেন। এরপর আল্লাহ সানহারীবের সৈন্য বাহিনীকে ধ্বংস করে দেন। ফলে সানহারীব ও তার পাঁচজন সঙ্গী ব্যতীত তার গোটা সৈন্য বাহিনী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই পাঁচজনের মধ্যে একজনের নাম ছিল বুখত নসর। রাজা হিযকিয়া লোক পাঠিয়ে এদেরকে ধরে এনে বেড়ি পরিয়ে সত্তর দিন পর্যন্ত শহরের অলি-গলিতে ঘুরিয়ে লাঞ্ছিত করেন। প্রতিদিন এদের প্রতি জনকে মাত্র দুটি করে যবের রুটি খেতে দেয়া হতো। এরপর তাদেরকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়।
আল্লাহ তখন শাইয়ার নিকট ওহী প্রেরণ করেন। তিনি রাজাকে এদের ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন, যাতে এরা আপন সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিজেদের শাস্তি ও লাঞ্ছনা ভোগের বিবরণ শোনাতে পারে। সানহারীব মুক্তি পেয়ে ফিরে গিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের লোকদেরকে সমবেত করে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করে। এ ঘটনার সাত বছর পর সানহারীবের মৃত্যু হয়।
বাদশাহ হিযকিয়ার মৃত্যুর পর বনী ইসরাঈলের মধ্যে পাপ প্রবণতা, অপরাধ, বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। শাইয়া (আঃ) আল্লাহর প্রত্যাদেশ পেয়ে বনী ইসরাঈলের লোকদেরকে আহ্বান করলেন এবং আল্লাহর আদেশ পালনের জন্য উপদেশ দান করলেন। তাঁর বক্তব্য শেষ হলে উপস্থিত জনগণ তাঁকে আক্রমণ করতে উদ্যত হল এবং হত্যা করার উদ্দেশ্যে তাঁর পিছনে ধাওয়া করল। শাইয়া (আঃ) আত্মরক্ষার জন্য সেখান থেকে পালিয়ে যান। এমন সময় তিনি সামনে একটি বৃক্ষ দেখতে পান। বৃক্ষটি নবীকে শত্রুর কবল থেকে রক্ষার জন্য দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। তিনি তাতে প্রবেশ করেন এবং বৃক্ষের ফাটল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু শয়তান তাঁর কাপড় টেনে ধরায় তাঁর আঁচল বাইরে থেকে যায়। শত্রুরা সেখানে উপস্থিত হয়ে বৃক্ষের মধ্যে কাপড় আটকা দেখতে পায়। তারা করাত দিয়ে বৃক্ষটি দ্বিখণ্ডিত করে ফেলে। ফলে শাইয়া (আঃ) এর দেহও দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।